সিলেটে ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাব পড়েছে। কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনও ভারী বৃষ্টিতে স্থবির জীবনযাত্রা। বৃহস্পতিবার (১২ মে) সন্ধ্যায় মুষলধারে বৃষ্টি নগরসহ সিলেটবাসীকে ঘরবন্দী করে দেয়। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের সমস্যা আরও বেড়ে গেছে। অসময়ে পাহাড়ি ঢলে ফসল ডুবে গেছে।
এদিকে সিলেট আবহওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধূরী জানান, যদিও আসানির প্রভাব ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে, তবে আজ শুক্রবার (১৩ মে) প্রচুর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২১ মে পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ২৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় ।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, বৌলাইসহ বিভিন্ন নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তীব্র হচ্ছে। স্থানে স্থানে জমে থাকা পানি ঢুকে বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্ভোগ বেড়েছে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লাউয়াই, বঙ্গবীর রোডসহ সেখানকার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দোকানেও পানি ওঠে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে হাটুপানি, ক্লাস বন্ধ
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ঐতিহ্যবাহী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ গেলে দেখা যায় আঙিনাজুড়ে হাটুপানি। নিচ তলায় কলেজ অধ্যক্ষের অফিস রুমসহ সব ক’টি রুমে পানি।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানান, বৃষ্টি হলেই সব ক’টি ক্লাস পানিতে ডুবে যায়। তাই দুই তিনদিন ক্লাস বন্ধ থাকে। ১৯২৩ সালে ৫ দশমিক ৪ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী প্রায় ৩ হাজার। কিন্তু বৃষ্টি এলেই লেখা পড়ায় বিঘ্ন ঘটে। নিচ তালায় স্থাপিত লাখ লাখ টাকা মূল্যের অনেক মেশিনপত্রও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, বিষয়টি তারা সিটি কর্পোরেশনকে অনেকবার জানিয়েছেন। কিন্তু সমাধান হচ্ছে না।
শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী জানান, পাশেই সুরমা নদীর ওপর কাজীর ব্রিজটি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির আঙ্গিনায় পানি জমে থাকে। জেলা খাদ্যগুদাম ও রেলওয়ে কলোনি হয়ে রত্না খাল পর্যন্ত যে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি ভুল পরিকল্পনা থাকায় এখন এই এলাকার পানি বের হয় না।
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নতুন ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু, ড্রেনের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ওই এলাকায় প্রচণ্ড জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে হাটুপানি, ক্লাস বন্ধ
সুনামগঞ্জ পৌর এলাকায়ও একই চিত্র
সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে বুধবার গভীর রাতে ড্রেন পরিষ্কার করতে দেখা যায়। স্থানীয় মেয়র ড্রেন বা নালার মধ্যে ময়লা আবর্জনাসহ বিভিন্ন ধাতবসামগ্রী না ফেলার জন্য পৌরবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
মেয়র নাদের বখত জানান, খুব শিগগিরই শত কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়। যার মাধ্যমে সুনামগঞ্জ শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।
পর্যটকদের আনন্দে বাধা
বৃষ্টির কারণে অনেক পর্যটক সিলেটে এসে হোটেলে আটকা পড়েছেন। পর্যটকরা নিরানন্দ সময় কাটাচ্ছেন। সিলেট নগরীর বেশীরভাগ নিম্নাঞ্চলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার পয়েন্টে সংস্কারের অপেক্ষায় থাকা জল্লারপারগামী রাস্তাটি এমনিতেই চলাচলের অনুপযোগী। তার উপর এই বৃষ্টির ফলে খানাখন্দে ভরা রাস্তায় পানি জমে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
পাঠানটুলা, লন্ডনীরোড, সাগরদিঘির পাড়, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা ও উপশহর, দক্ষিণ সুরমাসহ নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় প্রায় একই চিত্র।
ভেজা ধান ও খড় নিয়ে বিপাকে
সিলেট জেলার বিশ্বনাথ পৌর শহরের পুরানগাঁও গ্রামের একজন কৃষক জানান, ভেজা ধান মাড়াই করে রাখা। বৃষ্টির কারণে শুকিয়ে গোলায় তুলতে পারছেন না। খড়ও সব ভিজে নষ্ট হওয়ার উপক্রম।
দশঘর ইউনিয়নের আরেকজন কৃষক জানান, ধান তোলা কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে থমকে আছে। সময়মতো ধান ও খড় শুকাতে না পারলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জসহ বিভাগের অন্যান্য উপজেলায়ও খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওইসব স্থানেও একই চিত্র।
ওয়েবসাইট নকশা প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট
Leave a Reply