নিউজ ডেস্ক:: ১০৫ ফুট গভীর কুয়ায় আটকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু রায়ানকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জরুরি উদ্ধারকর্মীরা।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে মরক্কোর শেফচাউয়েন প্রদেশের ইঘরানের উত্তর গ্রামে অবস্থিত কুয়ায় আটকে আছে। দেশটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য কুয়ার পাশে খনন কাজ করছে।
এই উদ্ধার অভিযানকে অত্যন্ত জটিল বলা হচ্ছে। তবে উদ্ধার-কর্মীরা তাদের অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে ভূমিধ্বসের আশঙ্কায় শিশুটিকে উদ্ধারের এই তৎপরতা আরও বেশি বিপদজনক হয়ে উঠেছে।
উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, রায়ানের বাবা চারদিন আগে যখন কুয়াটি মেরামতের কাজ করছিলেন তখন সে হঠাৎ করে ১০৫ ফুট গভীরে পড়ে যায়।
মরক্কোর উত্তরাঞ্চলীয় একটি গ্রামে শিশুটিকে উদ্ধারের এই তৎপরতা মরক্কোও প্রতিবেশি আলজেরিয়ার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। উদ্ধারকাজ দেখতে ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
সমবেত লোকজন হর্ষ-ধ্বনি দিয়ে উদ্ধারকারীদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন। এবং মরক্কোর সংবাদ মাধ্যম ও সোশাল মিডিয়াতে এই খবরটি নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। রায়ানকে উদ্ধার করে কুয়ার ভেতর থেকে নিরাপদে বের করে আনা হচ্ছে–এরকম একটি দৃশ্য দেখতে সারা দেশ যেন রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে।
এদিকে, রায়ানকে উদ্ধারের এই চেষ্টা সমগ্র আরব বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।
কুয়াটি বেশি প্রশস্ত না হওয়ার কারণে এখন সেখানে বড় আকারের গর্ত তৈরি করে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বুলডোজার দিয়ে এই গর্ত করা হচ্ছে কুয়ার সমান্তরালে। কিন্তু সেখানকার মাটিতে পাথর ও বালি থাকার কারণে জায়গাটি ধসে পড়ারও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা জানান, তারা শিশুটির প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। গত মঙ্গলবার থেকেই রায়ানকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
তারা আশা করছেন গর্তটি যখন কুয়ার গভীরতার সমান পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে তখন আড়াআড়ি সুড়ঙ্গ তৈরি করে বালকটিকে বের করে আনা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে আবদেসালাম মাকোদি নামে একজন উদ্ধারকারী শুক্রবার দুপুরে বলেন, আমরা গত তিনদিন ধরে একটানা কাজ করছি। ফলে লোকজন ক্লান্ত হয়ে পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু তারপরেও পুরো দল ধৈর্য ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
রায়ানকে উদ্ধারের কাজে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় একজন বিশেষজ্ঞ মোহামেদ ইয়ানি কোয়াহাবি। কুয়াটি সরু হওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ধারকারীরা বৃহস্পতিবার বলেছে, তারা শিশুটিকে অক্সিজেন, পানি নামাতে সক্ষম হয়েছে। শিশুটির কাছ থেকে প্রতিউত্তর পেয়েছে।
শিশু রায়ানের মা ওয়াসিমা খারচিচ স্থানীয় টেলিভিশনকে বলেন, আমার ছেলেটার জন্য সবাই দোয়া করবেন। ঈশ্বরের যেন আমার সন্তানকে গভীর কূপ থেকে জীবিত এবং নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে। একইসঙ্গে তার তার কষ্ট যেন কমিয়ে দিন।
ছেলেটির বাবা খালিদ আগোরাম গণমাধ্যমকে জানান, তিনি মঙ্গলবার কয়েক ঘণ্টা ধরে তার ছেলেকে খুঁজছিলেন। পরে জানতে পারেন ছেলেটি কূপে পড়ে গেছে।
মরক্কোর সরকারি বার্তা সংস্থা এমএপি নিউজ জানায়, উদ্ধারকারীরা শিশুকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি সিসিটিভি ক্যামেরা পাঠিয়েছে।
সরকারের মুখপাত্র মুস্তাফা বায়তাস বৃহস্পতিবার বলেছেন, সরকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। শিশুটিকে বাঁচাতে সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজছে।
ঘটনাস্থলে মেডিকেল কর্মীরা রয়েছে। এছাড়া শিশুকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি হেলিকপ্টার রয়েছে।
এদিকে শিশু রায়ান ও তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানাতে হাজার হাজার মরক্কোর মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করছে। এছাড়া #SaveRayan হ্যাশট্যাগ চালু করা হয়েছে।
সুত্র: যুগান্তর
ওয়েবসাইট নকশা প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট
Leave a Reply